Thursday, April 2, 2020

ফ্লাট ক্রয়ের পূর্বে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত

ফ্লাট ক্রয়ের পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত --
১. ফ্লাটের মূল্য (Price of the flat)
২. ”কার্পেট এরিয়া” -- ফ্লাটের অভ্যন্তরের মূল ব্যবহারযোগ্য এরিয়া ("Carpet area" -- the actual area within the walls of the flat)
৩. জমির দলিল (Land record)
৪. সম্পত্তির আইনসঙ্গত অনুমোদন (Legal check of property)
৫. ফ্লাটের মালিকানা প্রাপ্তি (Flat possession)
৬. অর্থায়ন ব্যাংক (Financing banks)
৭. নির্মাণকারী-ক্রেতা চুক্তি (Builder-buyer agreement)
৮. ফ্লাটের অবস্থান (Location of the flat)
৯. লুকানো এবং অতিরিক্ত খরচ (Hidden and additional charges)


১. ফ্লাটের মূল্য (Price of the flat)
কোন ফ্লাট বা ঘর ক্রয়ের পূর্বে প্রথমেই খেয়াল করতে হবে এর মূল্যের ব্যপারে। নিজের সাধ্য অনুযায়ী বাজেট ঠিক করতে হবে; সেই অনুযায়ী যে ফ্লাট বা ঘরগুলো পাওয়া যাবে তার একটা লিস্ট করতে হবে। তারপর ঘরের মালিক বা নির্মাণকারীর কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ঘর বা ফ্লাটের সঠিক দাম যাচাই করে নিতে হবে। মূল্য যাচাই করার জন্য মূল মালিক বা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন, কোন বিশ্বস্ত এবং অভিজ্ঞ লোকের মাধ্যমে যাচাই করাতে পারেন, অথবা অনলাইনে যেসব মূল্য যাচাইয়ের ওয়েবসাইট আছে তার মাধ্যমে যাচাই করে নিতে পারেন।

২. ”কার্পেট এরিয়া” -- ফ্লাটের অভ্যন্তরের মূল ব্যবহারযোগ্য এরিয়া ("Carpet area" -- the actual area within the walls of the flat)
সাধারণত ফ্লাটের যে এরিয়া উল্লেখ করা হয় তা বলা হয় সিড়িঘর, লিফ্ট, ওয়াল, কলাম ইত্য়াদি সবসহ। ফ্লাটের ওয়ালের অভ্যন্তরে যে এরিয়া ব্যবহারযোগ্য তাকে বলা হয় ”কার্পেট এরিয়া”। এই কার্পেট এরিয়া ফ্লাটের মূল এরিয়ার চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ পর‌যন্ত কম হতে পারে। যেহেতু সিড়ি, লিফ্ট ইত্যাদি ফ্লাট ব্যবহারের জন্য অপরিহারয তাই এগুলো ফ্লাট এরিয়ার মধ্যে ধরা হয়। ফ্লাট ক্রয়ের সময় এই বিষয়গুলো অবশ্যই বিক্রেতার কাছ থেকে পরিষ্কারভাবে জেনে নিবেন।

৩. জমির দলিল (Land record)
কোন ফ্লাট বা ঘর কেনার আগে তা যে জমির উপর নির্মিত তার কাগজাদি বা দলিলপত্র অবশ্যই চেক করে নেবেন। জমি সঠিকভাবে সরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট মালিক বা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিষ্টার্ড তা দেখে নিতে হবে। জমি, ফ্লাট বা ঘর ক্রয়ের সময় যে “টাইটেল ডিড” বা মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয় তা স্বাক্ষরের পূর্বে অবশ্যই ভালভাবে আগাগোড়া পড়ে নিবেন। একজন অভিজ্ঞ এবং বিশ্বস্ত লোক দ্বারা তা পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উত্তম।

৪. সম্পত্তির আইনসঙ্গত অনুমোদন (Legal check of property)
আপনি যে ফ্লাটটি বা ঘরটি ক্রয় করতে যাচ্ছেন তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়ে নির্মিত হয়েছে কিনা তা দেখে নিন। নির্মাণকারীর কাছে অবশ্যই সকল উন্নয়ন এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এবং এনওসি সমূহ থাকতে হবে। সেই কর্তৃপক্ষগুলো হচ্ছে – নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষ, পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ, মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি। আপনি যদি কোন ব্যাংক লোন নিতে চান তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এই বিষয়গুলো যাচাই করে নিতে চাইবে।

৫. ফ্লাটের মালিকানা প্রাপ্তি (Flat possession)
এখন অনেকক্ষেত্রেই ফ্লাটের মালিকানা এবং দখল হস্তান্তরে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় নেয়। আপনি একজন ক্রেতা হিসাবে অবশ্যই বিক্রেতার কাছ থেকে ফ্লাটের মালিকানা এবং দখল পাওয়ার একটি পরিষ্কার সময়সীমা জেনে নিবেন। সাধারণত একজন নির্মাণকারী ছয় মাসের ”অতিরিক্ত সময়” নিতে পারে, তবে তার জন্য অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে।

৬. অর্থায়ন ব্যাংক (Financing banks)
কোন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাধারণত মন্দ-রেপুটেশনের একজন নির্মাণকারীকে ঋণ দিতে চায় না। তাই ফ্লাট ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে বিনিয়োগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী সম্পর্কে রেপুটেশন তথ্য যাচাই করে নেয়া ভাল। তা না হলে লোন না পেয়ে ফ্লাট নির্মাণকারীর ভবন নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এবং তার অসুবিধা ফ্লাটের ক্রেতাকেও ভোগ করতে হতে পারে।

৭. নির্মাণকারী-ক্রেতা চুক্তি (Builder-buyer agreement)
যখন আপনি কোন ফ্লাট বা ঘর ক্রয়ের জন্য নির্ধারণ করেন, তখন তা প্রাথমিক কিছু অর্থ বা টোকেন মানি দিয়ে বুক করতে পারেন। তখনই আপনাকে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির (ব্যাংক-নির্মাণকারী-ক্রেতা) মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই নির্মাতা-ক্রেতা চুক্তি স্বাক্ষর কারার পূর্বে অবশ্যই ভালভাবে পড়ে নিবেন। চুক্তির কোন বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝা না গেলে তা আলোচনা করে অবশ্যই ভালভাবে বুঝে নিবেন।

৮. ফ্লাটের অবস্থান (Location of the flat)
ফ্লাটের অবস্থানটা অত্যন্ত জরুরী, কারণ এখানে আপনি বছরের পর বছর থাকবেন। তাই এর আশেপাশের এলাকা সম্বন্ধে জেনে নেয়া ভাল – যাতায়াতের রাস্তা ভাল কি না, কাছাকাছি প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে কি না, হাসপাতাল, বাজার, রেস্টুরেন্ট, খেলার মাঠ ইত্যাদি কতটুকু দূরত্বে তা জেনে নেয়া ভাল। প্রয়োজনীয় গন্তব্যগুলো কাছাকাছি থাকলে আপনার যাতায়াত খরচ ও সময় উভয়ই কম লাগবে। এলাকার পরিচ্ছন্নতা, জনবসতির ঘনত্ত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদিও বিবেচনা করা উচিৎ।

৯. লুকানো এবং অতিরিক্ত খরচ (Hidden and additional charges)
ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে যে সব কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে হবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়ে নেয়া উচিৎ। কোথাও কোন লুকানো বা অতিরিক্ত চার্জ থাকলে তা আলোচনা করে নিতে হবে। আনুষঙ্গিক খরচের হিসাবও করে নেয়া উচিৎ, যেমন – জিএসটি খরচ, স্টাম্প ডিউটি, হোম লোন প্রসেসিং ফি, রেজিস্ট্রেশন খরচ ইত্যাদি। এখানে জেনে রাখা ভাল যে ফ্লাট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান যদি ফ্লাট হস্তান্তরের নির্ধারিত সময়ের পর আরও অতিরিক্ত ৬ মাস পরও ফ্লাট হস্তান্তর না করতে পারে, তবে ক্রেতা নির্মাণকারীর কাছ থেকে প্রতি মাসে জরিমানা পাবে।


ঢাকার-বাজার.কম থেকে তথ্য নিয়ে ফ্লাট কিনুন

#ফ্লাটবিক্রয় #হোমলোন #মিরপুরেফ্লাট #ঢাকারবাজার #কিস্তিতেফ্লাট

No comments:

Post a Comment